অগ্যতা তরুণ তরুণীদের হিন্দী ইংরেজি সিনেমা থেকেই অনুপ্রেরণা নিতে হচ্ছে-12th ফেল
12th Fail-2023
“12th Fail” নতুন বছরে পারলে মনোজ এর মত positively জেদ দেখাই, শ্রদ্ধার মত ভালোবাসি, পাশে থাকি, মনোজের গ্রামের ছোট্ট দোকানের দোকানি, মনোজের পাড়ার বন্ধুর মত অন্যের খুশি তে স্বার্থহীন ভাবে খুশি হই, দাদীর মত ফলের আশা না করে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে স্নেহ করি, আর পারলে অন্তত একজনের জীবনের গৌরী ভাইয়া হই.. কোনো অনাত্মীয় কে পরমাত্মীয় বানিয়ে নিই! জেতার আনন্দ তাতেও কিছু কম না, সে তো চোখের জলই বলে দেয়..
সিনেমাটা প্রত্যেকের দেখা উচিত শুধু তাই নয়, আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে ছবিটি থেকে। আমি অভিনয়, গল্প, পরিচালনা কিছু নিয়ে কথা বলবো না, কারণ আমার কাছে এই সমস্ত ফিল্ড এই সবাই ১০/১০। আমি কথা বলবো এই সিনেমার একটা চরিত্র নিয়ে। গৌরী ভাইয়া! TVF Aspirant এর কথা বারবার মনে পড়ছিল, আর সন্দীপ ভাইয়ার করুণ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।
একটা মানুষের কি অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য্য থাকতে পারে সেটা এই সিনেমাটা দেখলে বোঝা যায় ৷
আমার মনে হয়েছে রিয়েল লাইফের মনোজ যেমন তার সাপোর্টিভ পরিবার পেয়েছেন, ঠিক তেমনই মনোজের পরিবারও মনোজের মতো একটা ছেলে পেয়েছিল আর ঠিক একইভাবে শ্রদ্ধাও 

সবার প্রথম ঠাকুরমা সেই বাক্স খুলে তার সমস্ত জমানো পেনশনের টাকা দিয়ে দেওয়া...আহা, বুকটা আমার তখনই একটু ভারি হয়ে গিয়েছিল৷ এত অভাবের মধ্যেও পরিবারের কেউই কারোর সঙ্গ ছাড়েনি, অসম্ভব একটা পারিবারিক টান! অভাবে মানুষের সততা নষ্ট হয়....ঠিক যখন মনোজের বাবা মনের জোর হারিয়ে ফেলে তখন মনোজ ওই অবস্থায় বাবাকে মনের জোর দেয়! ওমন কষ্টের মধ্যেও শ্রদ্ধা ওকে ছেড়ে যায়নি ৷ হাজার অভাবেও মা ছেলেকে কষ্ট বুঝতে দেয়নি! জানিনা কিভাবে মানুষের এত মনের জোর আসে?!
আর শেষ সিনে যখন মা ফোনটা ধরে তখন আর চোখের জল বাঁধ মানেনি....যেন সত্যিই মনে হচ্ছিল আমিও কি একটা জিতলাম ৷
আর না বললেই নয় সেটা হল গৌরী ভাইয়া, নিঃস্বার্থ একটা সাপোর্ট সিস্টেম ৷ আর আরোও একটা চরিত্র আমার বেশ ভালো লেগেছে...যে মনোজ কে টাকা নেই জেনেও এক কথায় খেতে দিয়েছে! জানিনা সত্যিই কি চারপাশে মনোজ এত ভালো লোকজন পেয়েছিল!!
হ্যাঁ, “12th Fail” সিনেমাটি নিয়ে আমারও কিছু বলার আছে…
সম্প্রতি দেখে ফেললাম 12th Fail, সবার মত আমারও দেখা গতবছরের অন্যতম সিনেমা। কিন্তু সিনেমাটা কেন ভালো, কতটা ভালো সেই নিয়ে অজস্র প্রশংসামূলক পোষ্টের ভিড়ে আরো একটা পোষ্ট আমার নয়। আমি একটু অন্য একটা বিষয়ে আলোকপাত করছি।
সম্প্রতি সৎ পথে পরিশ্রম করে পাওয়া সাফল্য ও পরিশ্রমের লড়াই, মানসিক চাপ এইসব নিয়ে অনেক ভাল ভাল সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ হিন্দীতে তৈরী হচ্ছে। যে ট্রেণ্ডটা হিন্দীতে বহুবছর আগে কর্পোরেট চাকরি সামলে Start Up করার স্বপ্ন দেখাতে Pitchers এর মত সিরিজ শিখিয়েছিল, সেখানে UPSC Aspirants দের জন্য aspirants, গ্রামের পোষ্টিং এ জয়েন করে কাজ সামলে পড়াশোনা করে বেড়োতে যাওয়ার চেষ্টা করা Panchayat হোক বা NEET JEE Aspirants ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য ও লড়াইয় পরিশ্রম নিয়ে Kota Factory ; বড় স্ক্রিনেও Super 30 এর মত সিনেমায় যেমন জীবন বদলানো শিক্ষককে নিয়ে বায়োপিক হচ্ছে 12th Fail একজন aspirant এর বায়োপিক এবং দুটোই সত্য ঘটনা অবলম্বনে। 3 idiots তো ইঞ্জিনিয়ারদের জীবন নিয়ে Cult Classic, Rocket Singh এর মত underrated সিনেমাও স্বপ্ন দেখতে পরিশ্রম করতে শেখায়। সরাসরি প্রফেশনাল জীবনে পরিশ্রম সফলতার না হলেও Manji the Mountain Man, Rang de Basanti, Guru এগুলোও অনুপ্রাণিত করে, এমনকি Shaadi Mein Zaroor Aana থেকেও নাকি লোকজন অনুপ্রাণিত হয়। আর খেলাধুলোর ক্ষেত্রে লড়াই নিয়ে তো প্রচুর সিনেমা সিরিজ আছেই। এখানে আমি হলিউডের Pursuit of Happiness এর মত সিনেমার আলোচনাতেই গেলাম না।
উপরোক্ত সবকটি সিনেমা বা সিরিজের মূল উপজীব্য বলা যায় সৎপথে পরিশ্রমকে glorify করা, লড়াইয়ের সময়কার বাধাবিপত্তি মানসিক স্বাস্থ্য ও অবস্থার আলোচনা এবং লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই সমাজে এই positive impact ফেলা।
কিন্তু, হালফিলের বাংলা সিনেমা বা সিরিজে কখনোই এইধরনের টপিকের উপর কাজ দেখা যায়না কেন? এমনকি পুরোনো সিনেমা ঘেটেও আমার এই মুহুর্তে সত্যজিৎ রায়ের 'মহানগর' আর মতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনে সরোজ দে'র কাল্ট ক্লাসিক 'কোনি' ছাড়া সেরকম কিছু মনেই পড়ছেনা যে সিনেমা বা সিরিজ দেখলে রক্তগরম হয়ে যায়, পরিশ্রম করে জীবনে এবং সমাজে positive contribution এর শক্তি আসে। বলা হয় সিনেমা হল সমাজের দর্পণ। তাহলে কি যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে তারা UPSC পরীক্ষা দেয়না? আমাদের তরুণ ছেলেমেয়েরা রাত জেগে জয়েন্ট, নিট পড়েনা? সল্টলেক নিউটাউনে চাকরি করতে করতে কেউ স্টার্টআপের কথা ভাবেনা? গ্রামে পোষ্টিং বা ব্যাঙ্গালোর মুম্বাইয়ে চাকরি পেয়ে কেউ কলকাতায় ফিরে আসার কথা ভাবেনা? আমাদের সমাজে কি আর ক্ষিদ্দা বা Anand Kumar এর মত শিক্ষক নেই? আমাদের এখান থেকে কি কোনো পরিশ্রমী সৎ মেধাবী ছেলেমেয়ে ওঠেনা দেশে বিদেশে বিজ্ঞান সাধনায় যায়না? মুখার্জি নগরের মত আমাদেরও কি একটা বেলঘড়িয়া নেই কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া নেই? এখানে কি কোন সমস্যা নেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেমেয়েরা কি আন্দোলনে নেই এখানে কি পেপার লিক হয়না?
এইসব কয়টাই তো আছে। তবু আপনি বাংলা ভাষার সিনেমা দেখতে গেলে মনে হবে এখানে শুধু অহরহ খুন হয়, এখানে সবাই গোয়েন্দা, এখানে কোন তরুণ প্রজন্ম থাকেনা সবাই মাঝবয়সী বা প্রৌঢ় এবং তাদের সম্পর্কে চূড়ান্ত টানাপোড়েন চলছে এবং মোটামুটিভাবে এইসবকিছুই সিনেমার উপজীব্য। আর কমবয়সীদের গল্প থাকলেও সেখানে যৌনতায় সুড়সুড়ি দেওয়াটাই মুখ্য, কেরিয়ার নয়। যেন বাঙালীদের মধ্যে কেরিয়ার, চাকরি, পরিশ্রম এগুলো কোন সমস্যাই নয়, এগুলো আপনাসেই এসে যায়। যা আসেনা তা হল শান্তিনিকেতনে বা দার্জিলিং এ উইকেণ্ডে গিয়ে খুনটা কেন হল আর তার কিনারা কে করবে? আর সেটা ফিল্মের বয়স্ক অভিনেতা কিভাবে দেখছেন সেটা?
যাঁরা দেখেননি প্লিজ আগে দেখুন, hotstar- এ পাবেন। যাঁরা দেখেছেন আমাকে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
আমি খুব খুশি যে পড়াশুনো নিয়ে কোনো গল্প মেইনস্ট্রিম বলিউডে রিলিজ করলো। এর আগে OTT প্লাটফর্মে আমরা Aspirants ba Kota Factory-r moto সিরিজ দেখেছি। বলিউডে আমরা দেখেছি হিরো জেলে পাথর ভাঙছে, রিকশা টানছে, কয়লা খনিতে কাজ করছে ইত্যাদি। কিন্তু হিরো বই মুখে নিয়ে পড়াশুনো করছে, যৌবনের কিছু তাজা বছর স্রেফ পড়াশুনো করার পিছনে দিয়ে দিচ্ছে, পরীক্ষা দিয়েই চলেছে, সাফল্য আসছেনা,এই যে স্ট্রাগলের গল্প, এই গল্প খুব থ্রিলিং হয়না। এই বৃহৎ স্ট্রাগল কে এত সুন্দর ভাবে দেখানোর জন্য ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বিধু বিনোদ চোপড়া বাবু কে কুর্নিশ জানাই।
পথের পাঁচালীর আবহ সংগীত আবার ভারতবাসীর কাছে তুলে ধরলেন শান্তনু মৈত্র। তাঁকেও ধন্যবাদ। মনোজের বাবার চরিত্র টা কেন জানিনা আমাকে বারবার হরিহরের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
“Rags to riches” গল্প আমাদের সবারই ভাল লাগে। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে এই সিনেমাটি শুধু মাত্র একজনের সাফল্যের গল্প নয়। এই গল্প থেকে আমাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত, যে কত মানুষ কত কিছু থেকে বঞ্চিত থাকেন। আর আমরা কত কিছু পেয়েও তার মূল্য দিতে পারিনা।
হ্যাঁ, মনোজ এর চারিপাশে অসাধারণ কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। কিন্তু বন্ধু তার জীবনের একমাত্র প্রেম ছারখার করে দেওয়ার পরও কিন্তু তিনি বন্ধুকে ছাড়াতে এক ছুটে থানায় গিয়ে দাঁড়ান। শ্রদ্ধা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার পরও তিনি সত্যি লুকোনোর জন্য তাঁর বাড়ি অব্দি গিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে যান। এমনি এমনি তারা তার পাশে থাকেনি।
এইরকম সিনেমা কেন থিয়েটারে সাফল্য পায়না, রিলিজ হওয়ার পর হাতে গোনা কয়েকটা শো চলতে চলতে না চলতে সরে যায়, আমি কোনোদিন বুঝতে পারবনা। শুধু মারামারি আর নাচ গান দেখতেই কি হলে যাওয়া?
ডিজনির “ধুম মাচাও ধুম” সিরিয়াল থেকে আজকে 12th Fail, ভিক্রান্ত মাসীর কেরিরায়ের রাজকীয় বৃদ্ধি কে সেলাম ! নিঃসন্দেহে বলিউডে আগামী দিনের এক উজ্জ্বল তারকা হতে চলেছেন।
বিধু বিনোদ কে ১০০/১০ পরিচালনা, প্রযোজনা, ওমন নিপুণ মুন্সিয়ানায় গল্প বলা, একটুও exxagerate না করা আর হ্যাঁ, খুব গুরুত্বপূর্ণ: গালাগালির বন্যা না বওয়ানোর জন্য ( যেটা আজকালকার টিভি সিরিজ এ মাস্ট, আর গরীবগুর্বো, অভাব অনটন, পুলিশ এসব দেখালে তো কথাই নেই - মাস্ট, মাস্ট, মাস্ট!!
Genra: Biographical
IMDB Rating: 9.2/10
Personal Rating: 9.9/10
No comments