Header Ads

ডরমেন্সী এবং চিলিং আওয়ার

 ডরমেন্সী এবং চিলিং আওয়ার

স্কুল লাইফে পড়েছিলাম "প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে ব্যাতিক্রম"। অথচ প্রকৃতি নিজ গতিতে খুবই সুশৃঙ্খল, সংবিধিবদ্ধ ও ক্রিয়াশীল। তার চিরন্তন নিয়মে কখনো ব্যাতিক্রম ঘটে না।


আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির অনেক সুক্ষ্ম নিয়ম পর্যবেক্ষন করছি অথচ এর ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই। যেমন শীতে কিছু গাছের গ্রোথ কমে যায়, আবার কিছু গাছের বৃদ্ধি হয় খুব দ্রুত।
আবার শীতের সময় মাছের খাদ্যগ্রহন কমে যায় এবং বাড়েও কম। অনেক সময় বৃষ্টিতেও মাছের খাদ্য গ্রহন কমে যায়।


বর্ষার পর যখন শুষ্ক মৌসুম চলে আসে, খাল বিলের পানি শুকিয়ে যায়। মাটি শুকিয়ে খটখটে অবস্থা- তখনও কিন্তু কিছু মাছ এবং কোলা ব্যাঙ মাটির নিচেই চুপচাপ পরে থাকে। বিশেষ করে ক্যাট ফিশ প্রজাতির মাছ এবং ব্যাঙ। অবাক হলেও সত্যি- তখন তাদের খাদ্যগ্রহনের প্রয়োজন হয়না। রেচন প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ বন্ধ। প্রশ্ন আসে মনে " তখন তারা বেঁচে থাকে কিভাবে ? "......... তাদের সেই অবস্থাকেই বলা হয় "সুপ্ত হওয়া" ( না ঘুম না জাগ্রত )। মানব শিশু তার মায়ের গর্ভে যেভাবে থাকে- অথবা একটি ডিমের ভিতর সুপ্ত ভ্রুন... যা ভবিষ্যতে একটি পূনাঙ্গ প্রানী হয়ে বিকশিত হয়।


❄️❄️ ডরমেন্সী" / সুপ্তাবস্থা - ❄️❄️

সাধারণ শীত এবং প্রচন্ড ঠান্ডা কিন্তু এক নয়। সহনীয় তাপমাত্রায় মানুষসহ পৃথিবীর সকল প্রানী বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা যখন মাইনাস ( ০ থেকে -৩০/৪০/৫০ ) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে যায়- তখনই আমাদের প্রয়োজন হয় কৃত্রিম তাপের। আমরা মানুষ খুব সহজেই তার ব্যাবস্থা করে ফেলি। গরম কাপড়- অথবা বৈদ্যুতিক হিটার।


কিন্তু যাদের এই সুবিধা নেই তারা কি করবে? প্রকৃতি তাদেরকেও বাঁচতে শিখিয়েছে। তারাও বেঁচে আছে হাজার হাজার বছর ধরে। তারা যখনই বুঝতে পারে শীত চলে এসেছে- অদুর ভবিষৎ প্রচন্ড ঠান্ডা, যে ঠান্ডায় তাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়,- তখনই তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সুপ্ত অবস্থায় চলে যায়। যাকে আমরা নাম দিয়েছি "ডরমেন্সী"।


🍇🍇 আঙ্গুর মূলত মরুভূমির ফল হলেও সময়ের পরিক্রমায় হাজার হাজার বছর ধরে তা শীত প্রধান দেশ গুলোতে ওয়াইন তৈরীর মূল উপাদান। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই তারা প্রচন্ড ঠান্ডায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লাড়াইয়ে এবং নিজের বংশধারা অব্যাহত রাখার জন্য বরফের মধ্যে জমে গিয়েও বেঁচে থাকার কৌশল শিখে নিয়েছে। আর তা হচ্ছে ডরমেন্সী বা সুপ্ত অবস্থা।

এই সময় গাছের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। কোন কোন গাছের প্রায় ৮০ শতাংশও মরে যায়। তাদের সকল ডালপালা মৃত সদৃশ্য মনে হলেও শীত শেষে তারা আবার ঠিকই নতুন করে জেগে ওঠে, নতুন কুশিতে ফুল ফলের পশরা সাঁজায়। 🥰


📣 " চিলিং আওয়ার"-

আঙ্গুর বা যেকোন গাছ ইচ্ছা করলেই যখন তখন বা হঠাৎ করেই সুপ্ত অবস্থায় চলে যেতে পারেনা। তার আগে তাদের ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। গাছের পাতা থেকে শুরু করে সমস্ত কান্ডের বিশেষ কিছু খাদ্য উপাদান নিজের শিকড়ে সঞ্চয় করে রাখতে হয়।


এর ফলে পাতাগুলো ঝরে যেতে থাকে এবং কান্ডের আগা থেকে শুকিয়ে মরে যেতে থাকে। যখনই তার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো শিকড়ে মজুদ করা হয়ে যায় তখনই সে সুপ্ত অবস্থা বা ডরমেন্সীতে চলে যায়। প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো শিকড়ে মজুদ করার প্রক্রিয়ায় তার প্রয়োজন হয় ০ থেকে ৭.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং এভারেজ সময় লাগে প্রায় ১৫০ থেকে ২৫০ ঘন্টা।


কোন কোন আঙ্গুরের ভ্যারাইটিতে ৩৯ ঘন্টা থেকে শুরু করে ১০০০ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আবার আঙ্গুরের কিছু ভ্যারাইটি আছে যাদের সুপ্ত অবস্থায় যাওয়ার প্রয়োজনই হয়না। ( আঙ্গুরের পূর্ব পুরুষেরা এমনই ছিল, তাদের সুপ্ত অবস্থায় যাওয়ার কোন প্রয়োজনই ছিলনা )।



সুপ্ত অবস্থা বা ডরমেন্সীতে যাওয়ার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন হয় বা যতঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়- তাকেই আমারা বলি "চিলিং আওয়ার"।

No comments

Powered by Blogger.